কয়েক সপ্তাহ আগে মার্ক জাকারবার্গ পৃথিবীতে একটা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। একুশ শতকের একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা বিশেষ করে ইন্টারনেটের জন্য এটা একটা মাইলফলক। মার্ক জাকারবার্গের ভাষায় Meta সাকসেস অফ ইন্টারনেট। অনেকেই শুধু এটা জানে যে ফেসবুক ফেসবুকে থাকছে শুধু Meta নামে নতুন একটা কোম্পানির আবির্ভাব হয়েছে।আগে ফেসবুক ছিল ফাদার কোম্পানি আর এখন Meta হবে ফাদার কোম্পানির অধীনে থাকবে হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক ইনস্টাগ্রামের মতো অ্যাপস। এটা কোন বিশেষ ঘটনা না।
মেটাভার্স কী?
Meta কোম্পানি তৈরি করতে যাচ্ছেন ভার্চুয়াল দুনিয়া আমাদের ইউনিভার্সেল একটা পেরালাল কপি হবে। মেটাভাস এই মেটাভার্স তৈরিতে সহযোগী হিসেবে থাকছে বিশ্বের বড় বড় সব কোম্পানি সবাই মিলে নির্মাণ করতে যাচ্ছেন ভার্চুয়াল দুনিয়া যেটার নেতৃত্বে থাকছে মেটা মেটা ভার্সেস আপনি নিজেই নিজের একটা থ্রীডি দুনিয়া তৈরি করতে পারবেন। সেখানে আপনার একটা ভার্চুয়াল কপি বা এনিমেটেড কপি আধার বসবাস করবে আপনি চাইলেই শেখানে আপনার আলাদা একটা দুনিয়া বানাতে পারবেন।
কী কী করতে পারবেন মেটাভার্সে
ভার্চুয়াল কনসার্টে যাওয়া, অনলাইনে ঘুরতে যাওয়া, শিল্পকর্ম দেখা বা সৃষ্টি করা কিংবা কেনা—সবই করতে পারবেন মেটাভার্সের দুনিয়ায়।এনিমেটেড কপি আধার বসবাস করবে আপনি চাইলেই শেখানে আপনার আলাদা একটা দুনিয়া বানাতে পারবেন। আপনার বন্ধু বা আত্মীয়দের আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন আপনার প্রোফাইল পিকচারের মতই। আপনার তিনটি আবার সেখানে আপনার প্রতিনিধিত্ব করবে মজার বিষয় হচ্ছে, সেখানে আপনি আপনার একাধিক ভার্চুয়াল কপি তৈরি করতে পারবেন। যেমন গেম খেলার জন্য একটা, ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ভ্রমণের জন্য একটা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য একটা। শুধু তাই না সেই দুনিয়ায় আপনি পছন্দ মত যে কোন পোশাক পরতে পারবেন। তারপর ও আসবাবপত্র কিনতে পারবেন আপনার ভার্চুয়াল ঘর সাজাতে পারবেন।
আপনার ইচ্ছামত অনেকে সেখানে বিভিন্ন থ্রিডি অবজেক্ট তৈরি করে বিক্রি করতে পারবেন। আবার আপনি কিনবেন অবশ্যই এই দুনিয়ায় আপনি নিজেও বিক্রি পারবেন। যদি আপনি বিক্রেতা হিসেবে আপনার থ্রিডি অবজেক্ট তৈরি করতে পারেন। তখন আপনি বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে কোন ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন। আর তখন যদি টিচার এসে আপনার কানটা মুলে দেন তাহলে আপনি সে ব্যথা অনুভব করবেন। আপনি দূরবর্তী কারো সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার সাথে চ্যাট করা ছবি দেখা কথা শোনার পাশাপাশি তাকে অর্থাৎ তার ভার্চুয়াল কবিকে ধরতে পারবেন।তার সাথে পাশাপাশি বসে কথা বলার অনুভুতি পাবেন আপনার আই কন্টাক্ট ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন বডি মুভমেন্ট সব হবে বাস্তব জগতের মত হুবহু।
ফেসবুক কি সম্পূর্ণই মেটাভার্সে পরিণত হবে?
জাকারবার্গ জানিয়েছেন, ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ অনেক আশাপ্রদ। এই দুনিয়ার ভবিষ্যৎ ব্যাপক সম্ভাবনাময়। জাকারবার্গের মতে, ভবিষ্যতে ইন্টারনেটই ডিজিটাল অর্থনীতির কেন্দ্রে পরিণত হবে। তাই আগামীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে নয়, ফেসবুককে মেটাভার্স প্রতিষ্ঠান হিসেবেই দেখতে শুরু করবে মানুষ।
কিভাবে মেটাভার্সে জগতে প্রবেশ করবো?
এজন্য আপনাকে একটা এয়ার ব্লাস্ট পড়তে হবে। যা দেখতে আমাদের সাধারন চশমার মতই সেখানে একটা ক্যামেরা লাগানো থাকবে। আর কাজ করবে আপনার চোখও হাতের মুভমেন্ট অনুসরণ করে আপনার আশেপাশের পরিবেশ ভালো না লাগলে আপনি হাঁটতে হাঁটতে বা ঘরে বসেই চলে যেতে পারবেন বেটা ভার্শন।
কেমন হবে মেটাভার্স?
মেটাভার্স দিয়ে আপনি ঘরে বসেই ঘুরে আসতে পারবেন আমেরিকায়। চড়তে পারবেন আইফেল টাওয়ারের চোরাই কিংবা ধরে দেখবেন মিশরের হাজার বছরের পুরনো পিরামিড। আপনি চাইলে সেখানে বসেই সেই প্রাণীর নির্মাণের ইতিহাস দেখতে পারবেন। স্বচক্ষে দেখবেন প্রাচীন কাপড় পরা কোন মিশরীয় দাস টেনে নিচ্ছে এক বিরাট পাথর মরুভূমির বালুর ওপর শব্দ চিহ্ন এবং সেই মিশরীয় দাসের দীর্ঘশ্বাস। আপনি শুনতে পারবেন ধরে দেখতে পারবেন সে পাথরটিও। মহাকাশ সম্পর্কে জানতে চাইলে মহাকাশে একটা ভ্রমণ করে আসতে পারবেন।
আপনি চাইলেই মেটাভাস একটা বাংলাদেশে তৈরি করতে পারবেন। যেখানে বাংলাদেশের নদী-নালা-খাল-বিল পাহাড় ঝর্ণা সব থাকবে। অন্যদেরকে এদেশে হয়তো আপনি নিমন্ত্রণ জানাবেন। সেখানে ভিসা পাসপোর্ট ব্যবস্থা রাখতে পারবেন। আবার কাউকে একসেস না দিয়ে আপনি একাই থাকতে পারবেন। সে দেশের সব মিলিয়ে আপনি নিজেই তৈরি করতে পারবেন আপনার স্বপ্নের দুনিয়া। বন্ধুর সাথে বসে গল্প করতে চাইলে তাকে নক দিয়ে শুধু বলবেন এই আমার ঘরে আয় জরুরী আলাপ আছে। চাইলে আপনার ভার্চুয়াল ঘরে বসে ভার্চুয়াল বোর্ডে আপনি দাবা টেবিল টেনিস খেলতে পারবেন।
আরো কিছু ফেসবুক মেটাভার্স এর ফিচারসমুহ
ভার্চুয়াল টিভি দেখবেন গান শুনবেন মিটিং একটা ক্লাস খাওয়া-দাওয়া সব হবে মেটা ভার্সে। আপনি ডাক্তার দেখাতে পারবেন। সেখানে শিশুরা যাতে বিপথগামী না হয় সেজন্য প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সিস্টেম থাকবে।
মেটাভার্স এর ক্ষতিকর প্রভাব
সব মিডিয়া ইন্টারনেট যেভাবে আমাদের গ্রাস করতে যাচ্ছে। তখন আপনি কতক্ষণ অনলাইনে ছিলেন সেটা হিসেব না করে কতক্ষণ ছিলেন না সেটা হিসাব করবেন।
তথ্যের সুরক্ষা থাকবে তো?
এটা কি আমাদের তথ্য হাতানোর আরেকটা মাধ্যম হবে?মেটাভার্সে তথ্যের গোপনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি ফেসবুক। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি অতীতে যেভাবে ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্যবস্থাপনা করেছে তাতে উদ্বেগ থেকেই যায়। মেটাভার্সে ব্যবহারকারীদের আরও বেশি তথ্য থাকবে। এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।
কীভাবে তৈরি করা হচ্ছে মেটাভার্স?
এতক্ষণ যা বললাম তো আগামী বছরই হচ্ছে না এজন্য Meta এক দর্শকের একটা পরিকল্পনা নিয়েছে। তারা ১০০০ প্রোগ্রামারের একটা টিম তৈরি করেছে। সবাই মিলে ধাপে ধাপে একটা দুনিয়া নির্মাণ করছে নির্মাণ করছে আলাদা একটা ইতিহাস। আপনাকে এখন থেকেই সেই দুনিয়া সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। সেই সর্বগ্রাসী দুনিয়ায় আপনি কি করবেন এবং কিভাবে সেটা মোকাবেলা করবেন। সেটা এখন থেকেই ভাবতে হবে 2022 সাল খুব দূরে নয় দরজায় কড়া নাড়ছে কড়া নাড়ছে এক নতুন দুনিয়া।