কুরআন-সুন্নাহ বর্ণিত দোয়া ও জিকিরের ফজিলত

কুরআন-সুন্নাহ বর্ণিত দোয়া ও জিকিরের প্রতি মনোযোগী হওয়া। আর তাহলো-

– একনিষ্ঠতার সঙ্গে সুরা ফাতেহা পড়ে নিজেদের ওপর দম করা।
– মুআব্বিজ পড়ে (কুরআন মাজিদের শেষ তিন সুরা (ইখলাস, ফালাক ও নাস) পড়ে নিজেদের ওপর দম করা বা হাত বুলিয়ে নেয়া।
– প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া। ঘুমানোর সময়ও আয়াতুল কুরসি পড়া। আয়াতুল কুরসি হলো সুরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত।

সকাল-সন্ধ্যা এ দোয়া পড়া

اللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَدَنِيْ، اللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ سَمْعِيْ، اللّٰهُمَّ عَافِنِيْ فِيْ بَصَرِيْ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ، اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ، وَالْفَقْرِ، اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ .

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি সাময়ি, আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাসারি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি, ওয়াল ফাকরি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা।অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাকে শারীরিক সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করুন। হে আল্লাহ! আমার শ্রবণে সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করুন। আমার দৃষ্টিতে সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করুন। আপনি ব্যতিত কোনো ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি কুফুরী ও দারিদ্র্য থেকে। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে পানাহ চাই কবরের আজাব থেকে। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।’ (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে-

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিসসামায়ি, ওয়া হুয়াসসাম উল আলিম।’

সকাল হওয়া পর্যন্ত ওই ব্যক্তির উপর আকস্মিক কোনো বিপদ আসবে না। আর যে ব্যক্তি সকালে তিনবার এ দোয়া পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো বিপদ আসবে না।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)

অর্থ : ‘আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।

– সময় পেলেই নিজেকে অপরাধী ভেবে বেশি বেশি দোয়ায়ে ইউনুছ পড়া-

لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحٰنَكَ اِنِّیْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِیْنَ.

উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ-জ্বালিমিন।’

অর্থ : আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয় আমি অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৭)

– এ দোয়াটিও সকাল-সন্ধ্যায় পড়া
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ.

উচ্চারণ : ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন সাররি মা খালাকা।’

অর্থ : আমি আল্লাহর পূর্ণ কালিমাসমূহের সাহায্যে তাঁর সকল সৃষ্টির অকল্যাণ-অনিষ্ট থেকে পানাহ গ্রহণ করছি।’ (মুসলিম)- সকাল-সন্ধ্যায় এ দোয়াটি পড়া-

حَسْبِيَ اللهُ لَا إِلهَ إِلَّا هُوَ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ.

উচ্চারণ : ‘হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম।’

অর্থ : ‘আামার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তাঁর উপরই আমি ভরসা করছি। তিনি মহান আরশের রব।’ (আবু দাউদ)

– অবসর সময়ে বেশি বেশি এ দোয়া পড়া-
اللّٰهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُوْ، فَلَا تَكِلْنِيْ إِلٰى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ، وَأَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهُ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ.

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রাহমাতিকা আরঝু, ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি ত্বারফাতা আইনিন, ওয়া আসলিহ লি শাঅনি কুল্লুহু, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা।’

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার রহমতেরই প্রত্যাশী আমি। তাই আপনি আমাকে আমার উপর ন্যস্ত করবেন না। আপনি আমার সকল বিষয় পরিশুদ্ধ করে দিন। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।’ (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)

বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যা ও আজান-ইকামতের মাঝে এ দোয়াগুলো পড়া-

– اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَة
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া, ওয়াল আফিয়াতা ফিদ-দুনইয়া ওয়াল আখিরাহ।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্ত প্রার্থনা করছি।’

– اللّٰهُمَّ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِيْ دِينِيْ وَدُنْيَايَ وَأَهْلِيْ وَمَالِيْ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফি দ্বীনি ওয়া দুনইয়ায়ি ওয়া আহলি ওয়া মালি।’অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা ও নিরাপত্তা চাচ্ছি, আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও সম্পদে।’

– اللّٰهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِيْ، وَآمِنْ رَوْعَاتِيْ، وَاحْفَظْنِيْ مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِيْ، وَعَنْ يَمِينِيْ، وَعَنْ شِمَالِيْ، وَمِنْ فَوْقِيْ، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِيْ.
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাসতুর আওরাতি, ওয়া আমিন রাওআতি, ওয়াহফাজনি মিন বাইনি ইয়াদাইয়্যা, ওয়া মিন খালফি, ওয়া আন ইয়ামিনি, ওয়া আন শিমালি, ওয়া মান ফাওক্বি, ওয়া আউজুবিকা আন উগতালা মিন তাহতি।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন। আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়। আমাকে হেফাযত করুন সামনে থেকে, পেছন থেকে, ডান থেকে, বাম থেকে, উপর থেকে; এবং আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি নিচ হতে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে।’ (ইবনে মাজাহ)

– সকাল-সন্ধ্যায় এ দোয়া পড়া-
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ، أَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهُ، وَلَا تَكِلْنِيْ إِلى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ.

উচ্চারণ : ‘ইয়া হাইয়্যু, ইয়া কাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা আসতাগিছু, আসলিহ লি সাঅনি কুল্লুহু, ওয়া লা তাকিলনি ইলা নাফসি ত্বারফাতা আইনিন।’

অর্থ : ‘হে চিরঞ্জীব, হে সৃষ্টিকুলের নিয়ন্ত্রক, আপনার রহমতের দোহাই দিয়ে আপনার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি, আপনি আমার সকল বিষয় শুদ্ধ করে দিন, এক মুহূর্তের জন্যও আপনি আমাকে আমার উপর ছেড়ে দিয়েন না।’ (নাসাঈ,মুসতাদরাকে হাকেম)

– অবসর সময়ে বেশি বেশি এ দোয়া পড়া-
لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ لاَ مَلْجَأَ وَلاَ مَنْجَأَ مِنَ اللهِ إلاَّ إِلَيْهِ.

উচ্চারণ : ‘লা হাউলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহি লা মালঝাআ ওয়া লা মানঝাআ মিনাল্লাহি ইল্লা ইলাইহি।’

অর্থ : ‘আল্লাহর তাওফিক ছাড়া পাপ পরিহার করা এবং নেক কাজ করার শক্তি নেই। তাঁর আশ্রয় ব্যতিত তাঁর পাকড়াও থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই।’ (মুসনাদে বাযযার)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহ উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। সে মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে যাবতীয় মহামারি থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Share the article..

Leave a Comment