জেনে নেওয়া যাক, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল সম্পর্কে | আমাদের চলন বিল

বাংলাদেশ মূলত নদীমাতৃক দেশ। এদেশে প্রায় ১৩০০ টির বেশি নদী রয়েছে। আর এই নদীর ফলেই বাংলাদেশে প্রচুর বিল এলাকার সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষাকাল আসলেই এই বিলগুলো পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বাংলাদেশ অনেকগুলোই জনপ্রিয় বিল হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো চলনবিল। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল কোনটি? চলন বিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল। কিছু কিছু গবেষকদের ধারণা এটি শুধু বাংলাদেশে নয় পুরো ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিল হলো চলন বিল। এই বিলের নাম শুনে নাই, এমন মানুষ এদেশে পাওয়া কঠিন।

চলন বিলের অবস্থান

চলন বিলটি মূলত রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত।রাজশাহী চলনবিল নামেও পরিচিত। নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া থানার কিছু অংশ, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ থানা, পাবনা জেলার চাটমোহর ও ভাঙুরা থানা সহ মোট নয়টি থানা নিয়ে অবস্থিত এই বিলটি। তবে নাটোর জেলাকেই চলনবিলের কেন্দ্র হিসেবে অভিহিত করা হয়।

চলন বিলের আকার

শুধুমাত্র এই চলন বিল বাংলাদেশের প্রায় ৪৭ টি নদীর সংযোগ রয়েছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন এটি কত বড় বিল চলনবিল। প্রায় ২৭ বর্গ কিলোমিটার বা ১০ বর্গমাইল অবস্থা জুড়ে বিস্তৃত। (তবে এখন আর আকারটা অনেক ছোট হয়ে গেছে)। এর গড় গভীরতা ৪ ফুট এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ৮ ফুট। চলনবিলের বয়স কত তা এখনো কেউ সঠিকভাবে বলতে পারেনি।

চলন বিলের আয়তন

চলনবিল গঠিত হওয়ার সময় চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১ হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু বর্তমানে এর চলনবিলের আয়তন অনেক কমে এসেছে। বর্তমানে চলনবিলের আয়তন ৫০০ বর্গমাইল বা প্রায় ১৪২৪ বর্গকিলোমিটার। আবার কোন কোন জরিপ মতে চলনবিলের আয়তন ৮০০ বর্গমাইল বা প্রায় ২০৭২ কিলোমিটার।

নদীর সংযোগ

চলন বিল মূলত আত্রাই নদী থেকে উৎপত্তি। এছাড়াও এখনে বড়াল, নন্দকুজা, করোতোয়া তেলকুপি সহ আরো অনেকগুলো নদীর সংযোগ রয়েছে।

মানুষের জীবনযাত্রা

এই বিলে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। ফলে এলাকার মানুষজন নৌকায় যাতায়াত করে। পানি থাকার ফলে মানুষের নৌকায় যাতায়াতের জন্য সুবিধা হয়। তাছাড়াও মানুষ মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। এই বিল থেকে প্রচুর পরিমাণ মাছ পাওয়া যায়। যা পুরো উত্তরবঙ্গকে মাছের চাহিদা পূরণ করে দিতে পারে।

চাষাবাদ

অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস বিলটি পুরোপুরি পানিশূন্য অবস্থায় থাকে। তখন এই এলাকায় ধান চাষ করা হয়। মূলত এই এলাকা ধান চাষের জন্য বিখ্যাত। যেহেতু এই এলাকার বেশিরভাগ সময়ই পানিতে পরিপূর্ণ থাকে তাই ধানই মূল ফসল। তাছাড়াও শীতের সময় রসুনও চাষ করা হয়।

দর্শনীয় স্থান

এই এলাকাটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রসিদ্ধ। দূরদূরান্তের মানুষ এখানে শুধুমাত্র বিলের সৌন্দর্য দেখতে এখানে আসে। এই এলাকার মানুষ এই বিলকে মিনি-কক্সবাজার বলে থাকে। সন্ধ্যায় পানির মধ্যে সূর্য ডোবার দৃশ্য টা খুবই মনমুগ্ধকর। এখানে কয়েকটি দর্শনীয় স্থান হলো সিংড়ার জিরো পয়েন্ট, নাটোরের দীঘাপতিয়া এবং পাটুল, গুরুদাসপুরের বিলশা এবং ১০ নম্বর ব্রিজ। তাছাড়া তাড়াশে একটি জাদুঘরও রয়েছে।

চলন বিলের ছবি

IMG 20220102 082844

IMG 20220102 082818

IMG 20220102 082913

চলন বিলের নিয়ে কিছু কথা

যেহেতু এই এলাকার মানুষ কৃষি নির্ভর। তাই বেশিরভাগই মানুষই কৃষক। আর এ আলাকার জনপ্রিয়তা বজায় রাখতে হয় অনেক মানুষ অনেক কাজ করে গেছেন। কিন্তু তারপরও চলনবিল ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর মূল কারণ হলো আমাদের অসামাজিক কর্মকান্ড। আমরা যেভাবে নদী গুলো ভরাট করে ফেলছি। এভাবে নদী ভরাট করলে আর চলনবিল আর বিল থাকবে না। এখানে পানির অভাব দেখা দিবে। মূলত নদীগুলো থেকেই এই বিলে পানি আসে। আর যদি নদী গুলো ভরাট হয়ে যায় তাহলে আর এইবিলে পর্যাপ্ত পানি আসবে না।

পর্যাপ্ত পানির অভাবে চলনবিল তার প্রাকৃতিক বৈষম্য হারাবে। আর এই এলাকার মানুষ পুরোপুরি এর চলনবিলের ওপর নির্ভরশীল। তারাই এই বিলের উপরে জীবিকা নির্বাহ করে। তাছাড়াও এই পর্যটন কেন্দ্রগুলো থেকে সরকার প্রতি বছর রাজস্য ইনকাম করতে পারে। তাই আমাদের সামাজিকভাবে সচেতন হতে হবে। নদী ভরাট হওয়ার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। আসলে এই এলাকাটি আমাদের দেশের আর্থিক এবং সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তাই আমাদেরও উচিত চলনবিলকে রক্ষা করা।

Share the article..

Leave a Comment