সদকাতুল ফিতর কী এবং এর গুরুত্ব

ইসলামে সদকায়ে ফিতরের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ পাক কোরআন মজিদে একাধিকবার তার নির্দেশিত পথে বান্দাকে ব্যয় করতে বলেছেন। এতে তার পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদানের কথা বলা হয়েছে।

ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে সদকায়ে ফিতর আদায় করার ব্যাপারে প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসংখ্য হাদিস রয়েছে। তিনি বিধান অনুযায়ী ঈমানদারদের সদকায়ে ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।

সদকাতুল ফিতর কী এবং এর গুরুত্ব

এক হাদিসে আছে, মহানবী (সা.) এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন যেন মক্কার অলিগলিতে এ ঘোষণা দেয় ‘সদকাই ফিতর ওয়াজিব’। (তিরমিজি ২য় খণ্ড ১৫১ পৃষ্ঠা)।

ইসলামে সদকায়ে ফিতরের অনেক ফজিলত রয়েছে। সদকায়ে ফিতর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পছন্দনীয় আমলের মধ্যে একটি। সদকায়ে ফিতরের মাধ্যমে একমাস সিয়াম সাধণা মাহে রমজানের রোজা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।

হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, হুজুরে আনোয়ার (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত সদকায়ে ফিতর আদায় করা হয় না, ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার রোজা জমিন ও আসমানের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে।’’(কানযুল উম্মাল, ৮ম খণ্ড)।

আরেক হাদিসে আছে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘‘রাসূলে আকরাম (সা.) সদকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন, যাতে অনর্থক কথাবার্তা থেকে রোজাগুলোর পবিত্রতা অর্জিত হয়, অনুরূপভাবে মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যায়।’’ (সুনানে আবু দাউদ, ২য় খণ্ড)।

সদকাতুল ফিতর এর পরিমাণ এবং কাদের জন্যঃ

ইসলামী বিধান অনুযায়ী সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব (ফরজের কাছাকাছি)। মৌলিক চাহিদার অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে এক সা পরিমাণ যব, খেজুর, পনির কিংবা কিসমিস কিংবা এর সমপরিমাণ টাকা আদায় করতে হবে। সদকায়ে ফিতর আদায় করা না হলে বড় গুনাহগার হবেন।

সদকায়ে ফিতর আদায়ের পরিমাণ উল্লেখ করে এ সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস রয়েছে।

হযরত ইবনে ‍উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ-নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর রাসূলুল্লাহ (সা.) সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক যব হোক এক সা পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন। লোকজনদের ঈদের সালাতে বের হওয়ার আগেই তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারী)।

রাসূলের যুগে সাহাবিগণও এ পরিমাণ সদকায়ে ফিতর আদায় করেছেন।

এ প্রসঙ্গে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে তিনি বলেন, আমরা এক সা পরিমাণ খাদ্য, এক সা পরিমাণ যব অথবা এক সা পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা পরিমাণ পনির, অথবা এক সা পরিমাণ কিসমিস দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। (সহিহ বুখারী)।

সাদাকাতুল ফিতরের বিধান

ফিতরা জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৭০ টাকা, চাইলে বেশি দেওয়া যাবে।

গম কিংবা আটার বাজারমূল্য হিসাব করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২০২২ সালের ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ করেছে জনপ্রতি কমপক্ষে ৭০ টাকা। তবে চাইলে যে কেউ এর বেশি দিতে পারবেন (খেজুর কিংবা কিসমিসের দাম দিতে পারবেন)।

১ কেজি ৬৫০ গ্রাম গম বা আটা অথবা খেঁজুর, কিসমিস, পনির বা যবের মধ্যে যে কোনো একটি পণ্যের ৩ কেজি ৩০০ গ্রামের বাজার মূল্য ফিতরা হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা যায়। এই হিসাবে এবার সর্বনিম্ন ৭০ টাকা থেকে ২ হাজার ৩১০ টাকা ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সদকায়ে ফিতর কখন আদায় করবেনঃ

ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী- ঈদুল ফিতরের নামাজের আগেই প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। নাবালক ছেলেমেয়ের পক্ষ থেকে বাবাকে ফিতরা আদায় করতে হয়। আল্লাহ আমাদের আল্লাহর নির্দেশিত পথে সদকায়ে ফিতর আদায় করার তওফিক দিন। আমীন।

Share the article..

Leave a Comment