মক্কি এবং মাদানি সূরা সমূহের বৈশিষ্ট্য ও তাদের মধ্যকার পার্থক্য

হ্যালো বন্ধুরা আশা করি সকলে অনেক ভালো আছেন। আপনাদের কে আমাদের এই সাইটে আমার পক্ষ থেকে জানাই স্বাগতম। আজকের পোস্ট এ আমি আপনাদের সাথে মক্কি ও মাদানি সূরা সমূহের মধ্যকার পার্থক্য এই বিষয় টি নিয়ে কথা বলবো। তো চলুন দেরি না করে পোস্ট টি শুরু করে দেওয়া যাক।

 

আমরা যারা মুসলমান তারা নিশ্চয়ই আল – কুরআন সম্পর্কে জানি। এতে মোট ১১৪ টি সূরা রয়েছে। আমরা প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময় প্রতি রাকআত এ সূরা ফাতেহা এর সাথে অন্যান্য সূরা গুলো কেরাত করে থাকি।

আমরা যে কেরাত পাঠ করি তা কিন্তু দুই প্রকার মক্কি ও মাদানি। এটা হয়তো অনেকেই জানেন কেননা এটা অনেক কমন একটি বিষয়। তবে যারা জানেন না তাদের জন্য আজকের এই পোস্ট লিখা।

আল – কুরআন সর্বমোট ৩০ টি অংশে বিভক্ত। এ অংশ গুলো কে পারা বলা হয়। কুরআন মজিদ এ রয়েছে ১১৪ টি সূরা এবং ৬২৩৬ টি মতান্তরে ৬৬৬৬ টি আয়াত। অবতরণ এর সময় বিবেচনায় কুরআন মজিদ এর সূরা সমূহ কে ২ ভাগে বিভক্ত। যথাঃ – মক্কি ও মাদানি। নিম্নে এ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।

 

মক্কি সূরা

সাধারণ ভাবে বলা যায়, পবিত্র মক্কা নগরী তে আল – কুরআন এর যেসব সূরা গুলো নাজিল হয়েছে সেগুলো কে মক্কি সূরা বলে। প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী, মহানবি (স.) – এর মক্কা থেকে মদিনা তে হিজরত এর পূর্বে নাজিল হওয়া সূরা সমূহ গুলো কে ও মক্কি সূরা বলা হয় ।

এ প্রসঙ্গে ইয়াহইয়া ইবনে সালাম হতে বর্ণিত আছে যে, “মহানবি (স.) – এর হিজরত এর সময় মদিনায় গমনের পথে, মদিনায় পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত যে সূরা গুলো নাজিল হয় তাও মক্কি সূরা।” আল-কুরআন। মক্কি সূরার সংখ্যা মোট ৮৬ টি।

 

মক্কি সূরার বৈশিষ্ট্য

নিচে মক্কি সূরার বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলোঃ

১. মক্কি সূরা সমূহে তে তাওহিদ এবং রিসালাত এর প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।

২. মৃত্যু এর পরবর্তী জীবন কিয়ামত, জান্নাত-জাহান্নাম তথা আখিরাত এর সকল কথা বর্ণনা করা হয়েছে

৩. শিরক এবং কুফর এর পরিচয় বর্ণনা করে এ গুলো এর অসারতা প্রমাণ করা হয়েছে।

৪. মুশরিক এবং কাফির দে এর সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে।

৫. এই সূরা গুলো তে পূর্ববর্তী মুশরিক ও কাফির দে এর হত্যা যজ্ঞের কাহিনী, ইয়াতীম দে এর সম্পদ হরণ করা, কন্যা সন্তান কে জীবন্ত কবর দেওয়া ইত্যাদি কু – প্রথা ও কু – আচরণের বিবরণ রয়েছে

৬. পূর্ববর্তী সকল নবি এবং রাসুল গণ এর সফলতা সবং তাদের অবাধ্য দে এর শোচনীয় পরিণতি এর কথা বর্ণনা রয়েছে ।

৭. এ সূরা গুলো তে শরিয়ত এর সাধারণ নীতি মালা এর উল্লেখ রয়েছে।

৮. এই সূরা গুলো তে উত্তম চরিত্র এবং বৈশিষ্ট্যে এর বর্ণনা করা হয়েছে।

৯. এই সূরা গুলো সাধারণত আকার এ ছোট এবং আয়াত গুলো ও তুলনা মূলক ভাবে ছোট থাকে।

১০. এই সূরা গুলো এর শব্দ গুলো শক্তি শালী, ভাব – গম্ভীর ও অন্তরে প্রকম্পন সৃষ্টিকারী।

১১. এই সূরা গুলো তে প্রসিদ্ধ বিষয় সমূহ শপথের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।

 

মাদানি সূরা

সাধারণ ভাষায় বলা যায়, মদিনাতে নাজিল হওয়া সূরা গুলো কে মাদানি সূরা বলে। তবে প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী, মহানবি (স.) – এর মদিনায় হিজরত এর পর নাজিল হওয়া সকল সূরাকে মাদানি সূরা নামে আখ্যায়িত করা হয় ।

ইয়াহইয়া ইবনে সালাম হতে বর্ণিত, “মহানবি (স.) – এর মদিনাতে হিজরত এর পর মদিনা এর বাইরে সফরে থাকা অবস্থায় যে সূরা সমূহ নাজিল হয় সেগুলো ও মাদানি সূরা।” অর্থাৎ মহানবি (স.) এর হিজরত এর পর নাজিল হওয়া সকল সূরা গুলোই হলো মাদানি সূরা। মাদানি সূরা সমূহ মোট ২৮টি।

 

মাদানি সূরার বৈশিষ্ট্য

নিম্নে মাদানি সূরা গুলো এর বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলোঃ-

১. মাদানি সূরা সমূহে আহলে কিতাব তথা ইহুদি এবং খ্রিষ্টান দে এর প্রতি ইসলাম এর আহ্বান জানানো হয়েছে।

২. মাদানি সূরা সমূহে আহলে কিতাব এর পথ ভ্রষ্টতা এবং তাদের কিতাব বিকৃতি এর কথা বর্ণনা করা হয়েছে।

৩. এ সূরা সমূহ গুলোতে নিফাক এত পরিচয় ও মুনাফিক দে এর ষড় যন্ত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

৪. এই সূরা গুলো তে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক নীতি মালা বর্ণিত হয়েছে।

৫. এই সূরা গুলো তে পারস্পরিক লেনদেন, উত্তরা – ধিকার আইন, ব্যবসা – বাণিজ্য, ক্রয় – বিক্রয় সহ যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিধান বর্ণিত হয়েছে।

৬. এই সূরা গুলো তে বিচার – ব্যবস্থা, দণ্ড – বিধি, জিহাদ, পর – রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

৭. এই সূরা গুলো তে ইবাদত এর রীতি নীতি, সালাত, যাকাত, হজ, সাওম ইত্যাদি বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে।

৮. এতে শরিয়ত এর বিধি – বিধান, ফরজ, ওয়াজিব, হালাল – হারাম ইত্যাদি এর সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে।

৯. এই সূরা গুলো এবং এর আয়াত সমূহ তুলনা মূলক ভাবে দীর্ঘ মক্কি সূরার তুলনায়।

এখন একটা প্রশ্ন থাকতে পারে নামাজ এ আমরা কোন সূরা গুলো পড়বো মক্কি নাকি মাদানি? এটা কোনো ফ্যাক্ট না। আপনি চাইলে যে কোনো সূরাই পড়তে পারেন নামাজ এ। তবে বেশিরভাগ লোকজনই মক্কি সূরা পড়েন কারণ এগুলো অনেক ছোট সূরা হওয়ায় তাড়াতাড়ি নামাজ শেষ হয়।

তবে আপনারা যদি দীর্ঘক্ষণ নামাজ পড়তে চান বড় সূরা গুলো ও পড়তে পারেন। এটা সম্পূর্ণ একটি ব্যাক্তিগত বিষয়।

 

তো বন্ধুরা আশা করি এই পোস্ট টি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কিন্তু কমেন্ট করে জানাবেন। আর এরকম সব পোস্ট পেতে প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকুন আমাদের এই ওয়েব সাইট টি। আবার দেখা হবে পরবর্তী কোনো পোস্ট এ। সে পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেয।

Share the article..

Leave a Comment