চলুন জেনে নিই কোন মৌলের অভাবে উদ্ভিদে কী রোগ হয়!

হ্যালো বন্ধুরা আশা করি সকলে অনেক ভালো আছেন। আপনাদের কে আমাদের এই সাইটে আমার পক্ষ থেকে জানাই স্বাগতম। আজকের পোস্ট এ আমি আপনাদের সাথে কোন মৌলের অভাবে উদ্ভিদে কী রোগ হয় এই বিষয় টি নিয়ে কথা বলবো। তো চলুন দেরি না করে পোস্ট টি শুরু করে দেওয়া যাক।

 

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন মৌল কি তাই না! মৌল কোন গুলো? হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, লিথিয়াম, অক্সিজেন, স্ক্যানাডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি ইত্যাদি। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত মোট ১১৮ টি মৌল আবিষ্কার করা হয়েছে। একজন মানুষের দেহে থাকে ২৬ টি মৌল। এরকম উদ্ভিদেও থাকে অনেক মৌল।

একটা মৌল এর অভাবে কী হতে পারে তা নিশ্চয়ই অনেক এর ই জানা। তাও আপনাদেরকে আমাদের চেনা একটি মৌল অক্সিজেন দিয়ে এর একটা ব্যাখ্যা দেই।

মনে করুন আপনি এমন যায়গা আছেন যেখানে কোনো প্রকার অক্সিজেন নেই। আর আপনার কাছে আগে থেকে কোনো অক্সিজেন এর ব্যবস্থাও নেই। এখন কী করবেন। সেখান থেকে মুক্তি পেতে চাইবেন! তবে আপনার হাত পা যদি বাধা থাকে তবে? কিছুক্ষণ এর মধ্যই মারা যাবেন।

ঠিক তেমনি উদ্ভিদেও যদি কোনো একটি মৌল এর অভাব হয় তাহলে উদ্ভিদে নানা রোগ সৃষ্টি হতে পারে। আবার কিছু কিছু সময় মারাও যেতে পারে। তো চলুন জেনে নিই কোন মৌল এর অভাবে উদ্ভিদে কী রোগ হয়।

 

মৌল এর অভাবে উদ্ভিদে কী রোগ হয়

মৌল এর অভাবে উদ্ভিদে কী রোগ হয় তা নিম্নে দেওয়া হলোঃ –

 

নাইট্রোজেন (N)

নাইট্রোজেনের অভাব হলে ক্লোরোফিল সৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটে। ক্লোরোফিলের অভাবে পাতার সবুজ রং হালকা হতে হতে একসময় হলুদ হয়ে যায়। তার কারণ ক্লোরোফিল ছাড়া অন্যান্য বর্ণকণা বা পিগমেন্ট মিলিতভাবে হলুদ দেখায়। পাতা হলুদ হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ❝ক্লোরোসিস❞ (chlorosis) বলে।

লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ বা দস্তার অভাবেও ক্লোরোসিস হতে পারে কেননা এগুলোও ক্লোরোফিল উৎপাদনের সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। ক্লোরোসিসে কোষের বৃদ্ধি এবং বিভাজন হ্রাস পায়, তাই উদ্ভিদের বৃদ্ধি কমে যায়।

 

ফসফরাস (P)

ফসফরাসের অভাব হলে পাতা বেগুনি হয়ে যায়। পাতায় মৃত অঞ্চল সৃষ্টি হয় এমনকি পাতা, ফুল ও ফল ঝরে যেতে পারে। উদ্ভিদের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং উদ্ভিদ খর্বাকার হয়। বেশিরভাগ সময় খালি চোখে দেখে ফসফরাসের ঘাটতি বোঝা যায় না। যত দিনে লক্ষণ দৃশ্যমান হয়, তত দিনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আর তেমন কিছু করার থাকে না।

 

পটাশিয়াম (K)

পটাশিয়ামের অভাবে পাতার শীর্ষ এবং কিনারা হলুদ হয় এবং মৃত অঞ্চল সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে পাতার শিরার মধ্যবর্তী স্থানে ক্লোরোসিস হয়ে হলুদবর্ণ ধারণ করে। পাতার কিনারায় পুড়ে যাওয়া সদৃশ বাদামি রং দেখা যায় এবং পাতা কুঁকড়ে আসে। উদ্ভিদের বৃদ্ধি কম হয় এবং শীর্ষ ও পার্শ্ব মুকুল মরে যায়।

ক্যালসিয়াম (Ca)

কোষের সাইটোসলে ক্যালসিয়ামের স্বাভাবিক মাত্রা, মাইটোকন্ড্রিয়া এবং এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের স্বাভাবিক কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত। মাত্রা কমে গেলে মাইটোকন্ড্রিয়ায় অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন প্রক্রিয়া এবং এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলামের প্রোটিন ট্রাফিকিং প্রক্রিয়া বিপর্যস্ত হয়।

তাই ক্যালসিয়ামের অভাবে উদ্ভিদের বর্ধনশীল শীর্ষ অঞ্চল, বিশেষ করে পাতার কিনারা বরাবর অঞ্চলগুলো মরে যায়। পাতা কুঁকড়ে যায়, ফুল ফোটার সময় উদ্ভিদের কাণ্ড শুকিয়ে যায় এবং উদ্ভিদ হঠাৎ নেতিয়ে পড়ে।

 

ম্যাগনেসিয়াম (Mg)

ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে ক্লোরোফিল সংশ্লেষিত হয় না বলে সবুজ রং হালকা হয়ে যায় এবং সালোকসংশ্লেষণের হার কমে যায়। পাতার শিরাগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে অধিক হারে ক্লোরোসিস হয়।

 

আয়রন (Fe)

লৌহ বা আয়রনের অভাবে প্রথমে কচি পাতার রং হালকা হয়ে যায়, তবে পাতার সরু শিরার মধ্যবর্তী স্থানেই প্রথম হালকা হয় এবং ক্লোরোসিস হয়। কখনো কখনো সম্পূর্ণ পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়। কাণ্ড দুর্বল এবং ছোট হয়।

 

সালফার (S)

সালফার উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রোটিন, হরমোন ও ভিটামিনের। গাঠনিক উপাদানই শুধু নয়, একই সাথে এটি কোষে পানির সমতা রক্ষা করে। সালফারের অভাবে পাতা হালকা সবুজ হয় এবং পাতায় লাল ও বেগুনি দাগ দেখা যায়।

কচি পাতায় বেশি এবং বয়োবৃদ্ধ পাতায় কম ক্লোরোসিস হয়। সালফারের অভাবে মূল, কাণ্ড এবং পাতার শীর্ষ থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে টিস্যু মারা যেতে থাকে, যাকে ডাইব্যাক (dieback) বলে। কাণ্ডের মধ্যপর্ব ছোট হয় বলে গাছ খর্বাকৃতির হয়।

 

বোরন (B)

বোরন কোষপ্রাচীরের কাঠামোর মধ্যে অবস্থান করে। প্রাচীরটিকে তথা কোষটিকে দৃঢ়তা দেয়। বিপাক ক্রিয়ার বিভিন্ন বিক্রিয়ায় এর নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা রয়েছে। তাই বোরনের অভাবে পর্যাপ্ত দৃঢ়তা না পেয়ে এবং বিপাকে গোলযোগ হওয়ার কারণে উদ্ভিদের বর্ধনশীল অগ্রভাগ মরে যায়। কচি পাতার বৃদ্ধি কমে যায় এবং পাতা বিকৃত হয়, কাণ্ড খসখসে হয়ে ফেটে যায়। ফুলের কুড়ির জন্ম ব্যাহত হয়।

 

তো উপরোক্ত মৌল গুলো সম্পর্কে আপনাদের জানালাম যে, এগুলো এর অভাবে উদ্ভিদে কী কী রোগ হতে পারে। তো আশা করি এই সব মৌল এর যাতে কোনো অভাব না হয় গাছ বা উদ্ভিদ এর সে বিষয় গুলো খেয়াল রাখবেন।

 

তো বন্ধুরা আশা করি এই পোস্ট টি আপনাদের কাছে অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কিন্তু কমেন্ট করে জানাবেন। আর এরকম সব পোস্ট পেতে প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকুন আমাদের এই ওয়েব সাইট টি। আবার দেখা হবে পরবর্তী কোনো পোস্ট এ। সে পর্যন্ত সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেয।

Share the article..

Leave a Comment